ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
কাঁচা ছোলা আমরা কে না চিনি কাঁচা ছোলা কে হর্স পাওয়ারপাওয়ার বলা
হয়। কিন্তু আমরা জানি কি এই কাঁচা ছোলা হালকা আচে কোন পাত্রের ভেজে
ছাতু তৈরি করলে এর পুষ্টিগত গুণ অনেক অংশে বেড়ে যায়।
আপনি কি ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আপনি সঠিক পোস্ট এর ভেতরে এসেছ। নিচের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশা করি বুঝতে পারবেন ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে।
সূচি পত্র ঃ ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
- ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
- ছোলার ছাতু হজম ক্ষমতা উন্নত করে
- ছোলার ছাতু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
- ছোলার ছাতুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- ছোলার ছাতু ওজন কমাতে সাহায্য করে
- ছোলার ছাতু রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল কমায়
- ছোলার ছাতু ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
- ছোলার ছাতু শারীরিক শক্তি বাড়ায়
- ছোলার ছাতু বয়স্কদের জন্য উপকারী
- ছোলার ছাতু মহিলাদের জন্য উপকারী
- অতিরিক্ত ছাতু খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা দিবে
ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
ছোলার ছাতু খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার এতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, আইরন,ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রোটিন পাওয়া যায়। আপনি যদি ছোলার ছাতু নিয়মিত গ্রহণ করতে শুরু করেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন। ছাতু কষ্ট কাঠিন্য কমাতে উপকারী,হজম ক্ষমতা উন্নত করে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে,
আরও পড়ুন ঃমেথি শাকের উপকারিতা
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এছাড়াও প্রচুর উপকারিতা আছে। ছাতু খাওয়ার এত উপকারিতা থাকার জন্য ছাতুকে দেশি হরলিক্স নামেও ডাকা হয়। ছাতু হলুদ সস্তায় পুষ্টিকর খাবার তাই সুস্থ থাকার জন্য আমাদের ডায়েটে অবশ্যই এই ছোলার ছাতু রাখা প্রয়োজন।
ছাতু আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী,একাধিক গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে ছাতু আমাদের দেহের সার্বিক উন্নতিতে সাহায্য করে। এতে থাকা বিভিন্ন প্রকারের খনিজ উপাদান ভিটামিন উপকারি ফ্যাট ও ফাইবার আমাদের উপকারে লাগে। তাই নিয়মিত ছাতু খেলে প্রচুর উপকারিতা পাওয়া যায়।
ছোলার ছাতু হজম ক্ষমতা উন্নত করে
ছাতু খুব সহজেই হজম হয় এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অদ্র বোনীয় ফাইবার থাকে যা আমাদের অন্রের জন্য খুবই ভালো। এর ফলে ছাতু কোলন পরিষ্কার রাখে ও এসিডিটির মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। তাই হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ও পেট পরিষ্কার রাখার জন্য আপনি ছাতুর শরবত নিয়মিত খেতে পারেন এতে অবশ্যই উপকার পাবেন।
ছোলার ছাতু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার ফলে নিয়মিত এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফাইবার পেট পরিষ্কার রাখতে দারুন উপকারি। একইসঙ্গে এটি পাকস্থলীতে থলিতে জমে থাকা ক্ষতিকর তেল মসলা ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে। তাই আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় ছাতু রাখা অবশ্যই প্রয়োজন।
ছোলার ছাতুর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
ছাতুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ছাতুতে উপস্থিত শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে ফলে এই ধরনের খাবার খেলে হঠাৎ করে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। এই কারণে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ইচ্ছে হলেই ছাতুর শরবত খেতে পারেন। এছাড়াও এতে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তবে এটি খাওয়ার সময় চিনি বা রিফাইন সুগার ব্যবহার করবেন না।
ছোলার ছাতু ওজন কমাতে সাহায্য করে
বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত ওজন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অনিয়মিত জীবন যাপন ও কাইট পরিশ্রমের প্রতি অনীহা। অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য যে বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে। আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ করছেন তার থেকে কম ক্যালরি গ্রহণ করুন এর ফলে আপনার অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে।
এই ক্ষেত্রে ছাতু দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ছাতুর শরীরে নানা রকম উপকার করার পাশাপাশি অনেকক্ষণ পেট ভরা রাতে সাহায্য করে ফলে বারবার খাবার গ্রহণ করতে হয় না। এর ফলে দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয় না এই কারণেই ওজন বাড়ানোর সম্ভাবনা কমে যাই। আপনি ওজন কমানোর জন্য এই পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।
ছোলার ছাতু রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল কমায়
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত মানুষেরা কোনরকম সমস্যা ছাড়াই ছাতুর শরবত খেতে পারেন। ছাতুতে থাকে ফাইবার, প্রোটিন,ম্যাগনেসিয়াম এর ফলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং নির্দিষ্ট মাত্রায় ফাইবার থাকার ফলে এই কোলেস্ট্রল কমাতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন ঃ নিয়মিত আখরোট খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে এক গ্লাস জ্বলে ছাতু গুলে লেবু দিয়ে রোজ খেতে পারলে শরীরের সব টক্সিক উপাদান গুলি বেরিয়ে যাই।
ছোলার ছাতু ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
ছাতুতে প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় এই দুটি উপাদান ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর উপাদান গুলোকে বের করে দেয় এবং প্রোটিন শরীরের ভেতরের পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।
ছোলার ছাতু শারীরিক শক্তি বাড়ায়
অতিরিক্ত পরিশ্রমে আমাদের প্রচুর ঘাম হয় এবং দেহে শক্তির অভাব দেখা দেয়। ফলে শরীরে চলে আসে ক্লান্তি আর ঘুমঘুম ভাব। এসব থেকে বাঁচতে রোজ এক গ্লাস ছাতুর শরবত খেতে পারেন। এটি খাওয়ার সাথে সাথেই এর পুষ্টি উপাদান গুলো রক্তে মিশে যায় ফলে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়। এই কারণেই শরীর ও মস্তিষ্ক চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
ছোলার ছাতু বয়স্কদের জন্য উপকারী
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে নানা রকম শারীরিক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে, এক্ষেত্রে ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত ছাতু খেলে একাধিক বার্ধক্যকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না ফলে শেষ বয়সে নিরব থাকা যায়।
আরও পড়ুন ঃপালং শাকের উপকারিতা কি নিয়ম
একই রকম ভাবে এটি শিশুদের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য যে সকল খাদ্য উপাদান প্রয়োজন তার প্রায় সকল উপাদানি ছাতুর মধ্যে রয়েছে। তাই শিশুদের নিয়মিত ভাবে এটি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত এতে দারুন উপকার হবে।
ছোলার ছাতু মহিলাদের জন্য উপকারী
মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের সময় শরীরে দেখা দেওয়া পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে ছাতুর শরবতের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে। ছাতুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন থাকে যা শরীরে সচলতা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অতিরিক্ত ছাতু খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা দিবে
বেশি ছাতু খেলে পেটে গ্যাস হয়, তাই যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা ছাতু খাবেন না বা খেলেও অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত। যাদের গলব্লাডারে স্টোন আছে তারাও ছাতু খাবেন না। এবং যাদের ছোলা এলার্জি আছে ও ছোলা হজম করতে অসুবিধা হয় তাদেরও ছোলার ছাতু খাওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও ছোলার ছাতু খাওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যেমন-বাজারে যে সব ছোলার ছাতু পাওয়া যায় সেই সব ছাতু ব্যবহার না করে। ভাজা ছোলা বাজার থেকে কিনে বাড়িতে ছাতু বানিয়ে নিতে হবে। বাজার থেকে ছোলা কেনার সময় অবশ্যই খোসা সহ ছোলা কিনবেন কারণ এতে দ্রবণীয় ফাইবার বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।
এই ছাতু খেলে অবশ্যই বেশি উপকার পাবেন। আপনার যদি ছাতু খাওয়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে শুরুর দিকে অল্প পরিমানে ছাতু খাবেন এবং ধীরে ধীরে ছাতুর পরিমাণ বাড়াতে পারেন। ছাতু খাওয়ার সবচেয়ে হিলদি ও সহজ পদ্ধতি হলো, ছোলার ছাতুর শরবত। আপনি এক বা দুই চামচ পানির মধ্যে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে গেল আপনার ছোলার ছাতুর শরবত।
সাদ বৃদ্ধির জন্য বিট লবণ ব্যবহার করতে পারেন।যদি আপনার হাই ব্লাড প্রেসার থাকে তাহলে বিট লবণ ব্যবহার করবেন না। এছাড়াও এতে লেবু ও পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। সাদ বাড়ানোর জন্য আপনি যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান এতে ব্যবহার করতে পারেন তবে এতে চিনি বাড়ি রিফাইন সুগার ব্যবহার করবেন না।
শেষ কথা ঃ ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
উপরের কনটেন্টটি পুরোপুরি করলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে। আরো জানানোর চেষ্টা করেছি ছোলার ছাতু হজম ক্ষমতা উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। ওজন কমাতে সাহায্য করে ,উচ্চ রক্তচাপ ও কলিস্টারের মাত্রা কমায় ।এছাড়াও ছোলার ছাতু সৌন্দর্য বাড়ায় ।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং এটি বয়স্কদের জন্য অনেক উপকা। এছাড়া জানানোর চেষ্টা করেছি ছোলার ছাতু মহিলাদের জন্য উপকারী এবং অতিরিক্ত ছাতু খেলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় সে সম্পর্কে। আশা করি ছোলার ছাতু খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে সকল ধারণা পেয়ে গেছেন। এরকম আরো নতুন নতুন ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে চোখ রাখুন প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট কিছুক্ষণ ডট কম এ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url