আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম
বাজারে অনেক ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায়। কিন্তু আপনি জানেন কি কোন ভিনেগার দিয়ে
আপনার জন্য। এবং আপনি কোন ভিনেগারটি খাব।
আপনি কি ভিনেগার খাওয়ার চিন্তা করছেন কোন ভিনেগার খাবেন এবং কিভাবে খাবেন তা জানতে নিচের পোস্টটি পুরোপুরি চলুন। আপেল সিরিয়ার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে নিচের পোস্ট টিতে।
সূচি পত্রঃ আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম
- আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম
- আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
- আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে
- আপেল সিডার ভিনেগার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- অ্যাপেল সিডার ভিনেগার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- আপেল সিডার ভিনেগার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
- আপেল সিডার ভিনেগার মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
- আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
- কোন ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী
- শেষ কথা
আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম
বেশ কয়েক বছর ধরে আপেল সিডার ভিনেগার নামটি খুব জনপ্রিয় হয়েছে, কারণ দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর থেকে শুরু করে পেটে জমে থাকা মেদ কমাতে আপেল সিডার ভিনেগার দারুন ভাবে কাজ করে। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা বেড়ে যায়
এর ফলে রক্তে শর করার মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়াও হজম শক্তি বাড়াতে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে এটি দারুণভাবে কাজ করে। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আমাদের দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী একটি পানীয়,প্রাচীন গ্রিক সভ্যতাতেও এর বর্ণনা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন ঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
ভিনিগার শব্দটি ফরাসি ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে যার অর্থ টক সাবযুক্ত ওয়াইন। সহজ কথায় বলতে গেলে আপেল সিডার ভিনেগার হচ্ছে একটি fermented জুস একে তৈরি করতে অ্যালকোহলীয় গাজন প্রক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য ভিনেগারের মতো এতে রয়েছে ৫% এসিডিটি প্রস্তুত প্রণালী এবং উপকরণের ভিন্নতা অনুযায়ী আপেল সিডার ভিনেগার নানা রকমের হয়ে থাকে।
যেমন- আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার, ফিল্টার করা আপেল সিডার ভিনেগার, পাস্তুরাইজেশন ছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার, অর্গানিক আপেল সিডার ভিনেগার, এছাড়াও unfiltered এবং raw আপেল সিডার ভিনেগার বাজারে বেশ উল্লেখযোগ্য।
আপেল সিডার ভিনেগার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
টাইপ টু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সকলে জানি টাইপ টু ডায়াবেটিসে দেহে ইনসুলিন হরমোনের উৎপাদন হার কমে যায় ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গবেষকদের দৃঢ় বিশ্বাস রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে বার্ধক্য সহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন ঃ তিসি বীজের উপকারিতা ও খাবার নিয়ম
বিভিন্ন রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন-ভাত, সাদা আটার রুটি, চিনি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। একই সাথে রুটিন মাফিক আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
বেশ কিছু গবেষণায় থেকে জানা গিয়েছে যে আপেল সিডার ভিনেগার দেখে ইনসুলিন হরমোনের এর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং খাবারের পর রক্তে শর্করার হার কমাতে সাহায্য করে।তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে আপনি আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করতে পারেন এতে অবশ্যই সুফল পাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার ওজন কমাতে সাহায্য করে
আপেল সিডার ভিনেগার এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি আমাদের মেটাবলিজম বুস্ট করে এর ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। এর জন্য আমরা প্রতিদিন অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে বাধা প্রাপ্ত হই এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে কাঙ্খিত ফলাফল পেতে অবশ্যই তিন মাস অব্দি আপেল সিডার ভিনেগার গ্রহণ করা প্রয়োজন।
কিছু গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী আপেল সিডার ভিনেগার তলপেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। তাই আপনি যদি দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ডায়েটের অংশ হিসাবে আপেল সিডার ভিনেগার কে বেছে নিতে পারেন। এর পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম করলে খুব কম সময়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আপেল সিডার ভিনেগার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
আমাদের পাচনতন্ত্র যদি সঠিক থাকে আর আপনি যদি খাবার সঠিকভাবে হজম করতে পারেন তাহলে আপনি দীর্ঘদিন সুস্থ থাকবেন কিন্তু আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খারাপ খাদ্য অভ্যাসের কারণে বদহজম একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
এক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার দারুন ভূমিকা পালন করে কারণ এটি পাকস্থলীর এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়াও এটি আমাদের পাকস্থলীর পেপসিন নামক এনজাইম তৈরীর মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এর ফলে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হজমে পেপসিন খুব দ্রুত কাজ করে ফলে খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয়।
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার একটি মারাত্মক সমস্যা। আমাদের চেনা পরিচিত অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় আক্রান্ত। এই ক্ষেত্রে তার ভিনেগার বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে কারন আমাদের কিডনি নিজে থেকেই রেনিন নামক একটি হরমোন উৎপন্ন করে।
আরও পড়ুন ঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
এই হরমোনটি আমাদের রক্তনালীকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সংকুচিত বা প্রসারিত করতে পারে। এক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার রেনিন নামক হরমোনটিকে আমন্ত্রণ করে রক্তনালীকে স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আপেল সিডার ভিনেগার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
আপেল সিডার ভিনেগার রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা আমি আনতে পারে। ছাড়াও রক্তচাপ এবং ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে ফলে স্বাভাবিকভাবেই হৃদপিন্ডের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসে।
তাই সুস্থ ও হৃদযন্ত্রের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় আপেল সিডার ভিনেগার রাখা অবশ্যই প্রয়োজন। নিয়মিতভাবে এটি সেবন করলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাই।
আপেল সিডার ভিনেগার মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
মুখের দুর্গন্ধ আমাদের অনেকের কাছে একটি মারাত্মক সমস্যা, কারো সাথে কথা বলার সময় এটি একটি বিরক্তি কর পরিস্থিতি তৈরি করে। এই ক্ষেত্রে আপেল সিডার ভিনেগার কে মাউথওয়াশ হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে কারণ আপেল সিডার ভিনেগারে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মুখের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী একটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে।
এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করার পাশাপাশি দাঁত ও মারি মজবুত রাখে,ত্বকে সুরক্ষা প্রদান করে, আপেল সিডার ভিনেগারে উপস্থিত থাকে এন্টি মাইক্রোবেয়াল উপাদান যা ত্বকের পি এইচ এর মান স্বাভাবিক রাখে। তাই বহু প্রাচীনকাল থেকেই ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করতে এটি ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও ব্রণ বা একমি দূর করতে অনেকেই আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করে থাকে।
আরও পড়ুন ঃ সাদা তিলের উপকারিতা
তবে সরাসরি প্রয়োগের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন কেননা অনেকের ত্বকের জন্য এটি সংবেদনশীল হতে পারে। এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগারের অনেক উপকারিতা আছে যেমন-ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, মাথার খুশকি দূর করে, ও সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে।
আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম
ক্ষেত্রবিশেষে আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার নিয়ম ও ব্যবহারবিধি ভিন্নতা থাকতেই পারে। তবে সাধারণভাবে এক গ্লাস ইসদ উষ্ণ জলে ১থেকে ২টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এছাড়াও যারা ওবেসিটি নামক সমস্যায় ভুগছেন বা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চান তারা অবশ্যই তারা অবশ্যই ডায়েটে আপেল সিডার ভিনেগার যোগ করতে পারেন।
কোন ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী
এক্সপারদের মতে আপনি আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার বা unfiltered ও raw আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের অনলাইনে শপিংয়ে বা শহরের বড় গ্রোসারীতে বা শপিং মলে আপনি এই ধরনের আপেল সিডার পেয়ে যাবেন।
আপেল সিডার ভিনেগার কেনার সময় কোন ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার কিনছেন সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক ও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।তবে কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার সেবন করা উচিত নয়,কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করলে বেশ কিছু অসুবিধা হতে পারে।
যেমন-দীর্ঘমেয়াদে এটি সেবন করলে দেহে পটাশিয়াম এর পরিমাণ কমে যেতে পারে, এটি অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে দাঁতে এনামেলের ক্ষতি হতে পারে, এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে তবে যাদের আলসার বা এসিডিটির মত সমস্যা আছে তাদের আপেল সিডার ভিনেগার সেবন করা উচিত নয়।
শেষ কথাঃ আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম
উপরের পোস্টটি পুরোপুরি পড়লে আশা করি বুঝতে পেরেছেন আপেল সিডার ভিনেগার এর উপকারিতা ও নিয়ম সম্পর্কে। আপনাদের আরো জানানোর চেষ্টা করেছি আপেল সিডার ভিনেগার কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও আপেল সিডার ভিনেগার হজম শক্তি বৃদ্ধি কর্ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ,এবং হৃদ যন্ত্র ভালো রাখে। এছাড়া আপেল সিডার ভিনেগার মুখের দুর্গন্ধ দূর করে আপনাদের আরো জানানোর চেষ্টা করেছি আপেল সিডার ভিনেগার খাবার নিয়ম,
এবং কোন ধরনের আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। আমাদের
পোস্টটি যদি ভালো লাগে এবং প্রতিদিন নতুন নতুন ইনফরমেটিভ পোস্ট পেতে চান তাহলে
ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট কিছুক্ষণ ডট কম এ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url