আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
বাংলাদেশের মানুষ যে সকল পানীয় পান করে থাকে তার ভেতরে চা বেশ জনপ্রিয় একটি পানীয়। সকালের নাস্তা কিংবা বিকেলের নাস্তা বা বাজারে আড্ডায় চায়ের কোন জুড়ি নেই।
চা খায় না এমন মানুষ খুব কমই আছে বিশেষ করে শীতের সময় তো কথাই নেই। কোন চা খাবেন ঠিক করতে পারছেন না তাহলে আমাদের পোস্টটি পড়ুন এবং জানুন আদা চা খাওয়ার উপকারিতা গুলো।
ভুমিকাঃ আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
- আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
- কি কি সমস্যা থেকে রেহাই মিলে সেটা জেনে নিই
- গরমে আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
- আদা চা খেলে আমাদের শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে
- শেষ কথা
আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
আদা চা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলবো। আচ্ছা চা আমাদের অনেকের পছন্দের পানীয়, তার সঙ্গে যদি মেশানো হয় ছোট্ট এক টুকরো আদা তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত কাজ ও হয়ে যাই। অর্থাৎ চায়ের তৃষ্ণাও মিটলো আর আদার গুনে শরীর ছোট বড় রোগ থেকে নানা রকম রেহাইও পেল।
বহু শতাব্দী ধরে আদাকে স্বাস্থ্যকর ও বহুগুণ সম্পন্ন ভেষজ হিসেবে ধরা হয়। আদার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া রোধই, ভাইরাস রোধী, প্রদাহ রোধি উপাদান।
আরও পরুনঃচিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আদার অনেক ওষুধি গুণ রয়েছে। একটি ভিটামিন এ, সি, ই এবং বি কমপ্লেক্সের ভালো উৎস। এর পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, পসফরাস, আইরন, জিংক, ক্যালসিয়াম এবং বিটা ক্যারোটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এছাড়া আদা ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন মিনারেল অন্যতম উৎস।
আদা হজম পদ্ধতি ভালো করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লিভার পরিষ্কার রাখে। এজমা ও হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে। সকালে উঠে এক কাপ আদা চা পান করলে একাধিক রোগ ব্যাধি দূরে থাকবে। তালিকায় সুগার প্রেসারের মত অসুখ ও রয়েছে।
কি কি সমস্যা থেকে রেহাই মিলে সেটা জেনে নিই
ওজন এবং ব্লাড সুগার কমায়, গবেষণায় দেখা গেছে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমাতেও অত্যন্ত কার্যকারী আদা চা।এই চা খেলে দেহের ফ্যাট দ্রুত ভেঙে যাই। এমনকি শরীরের নতুন করে ফ্যাট জমাতেও বাধা দেয় এই পানীয়। তাই ওজন কমাতে চাইলে এই চা হতে পারে আপনার নিত্য সঙ্গী।
এইদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তর জন্য এই চায়ের কোন বিকল্প নেই। এটা চা দেহে ইনসুলিনের কার্যকরীতা বাড়িয়ে দেয় ফলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই কারণে তিন মাস গড় সুগার বা এইচ, বি, এ, 16 score অনেকটাই কমে।
ব্যথা নাশক ক্ষমতা রয়েছে, বর্তমানে প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই ব্যথায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। বিশেষত্ব মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রকট বেশি। জানলে অবাক হবেন যে সামান্য আদা চা খেলে কিন্তু ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। আদায় রয়েছে জিনজিরল নামক একটি উপাদান।
এই উপাদান ব্যথা কমানোর পাশাপাশি প্রদাহ নাশ করতেও সাহায্য করে। তাই যারা ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত আদা চা এর পিয়ালাই চুমুক দিতেই পারেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকারী, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর জীবনে কষ্টের সীমা থাকেনা। রোগীর পাশাপাশি ভুগতে হয় পরিবার কেউ। তাই যেনতেনও প্রকারের ক্যান্সার প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আদা চা।
আরও পরুনঃ তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাতটি গবেষণায় দেখা গেছে আদায় থাকা জিনজিরল স্যাগল নামক দুটি উপাদান ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে এমনকি দেহ থেকে মৃত কোষ কে বের করে দিতেও সাহায্য করে এই দুটি উপাদান। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অনেকটাই সুবিধা হয়।
মস্তিষ্কের বন্ধু, বর্তমানে একটু বয়স হলেই অনেকেই অক্সেডে টিপস ট্রেস ও প্রদাহ জনিত কারণে।Alzheimer's মত অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এই অসুখে আক্রান্ত রোগী সবকিছু ভুলতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ইনাদের পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অতিবাহিত করাও কঠিন হয়ে যায়।
আদা চা মস্তিষ্কের deneration রোদ করতে পারে ফলে এই ধরনের রোগ ব্যাধি দূরে থাকে। ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে, দিনে এক থেকে দুই কাপ আদা চা প্রত্যেকেরই খাওয়া উচিত, এতে একাধিক উপকার আসে।বিশেষত্ব ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুক্তভোগীরা অবশ্যই আদা চা খাবেন।
নিয়মিত আদা চা পানকরা ব্যক্তিদের ব্লাড প্রেসার সহজে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।রক্তে কমে cholesterol এর মাত্রা। এই কারণে হার্ট সুস্থ রাখার মতো কাজও করে। তাই হার্টের রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলেও আদা চা নিয়মিত খেতে পারেন।
গরমে আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
গরমে সতেজ থাকার স্বাভাবিক ভাবেই আমরা ঠান্ডা পানীয় খুঁজি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেমোনেট বা আইস টি এর প্রতি আমাদের আগ্রহ থাকে। তবে জেনে অবাক হবেন যে এই গরমে আপনাকে সতেজ রাখতে আদা চা ও সমান কার্যকারী।
এটি গরম হলেও অনেক সুবিধা দেয়। তাই কেবল শীতকালে নয় গরমকালেও এটি সমান উপযোগী। এই চা প্রতিদিন পান করার অভ্যাস আপনাকে অনেকভাবে সুস্থ রাখবে। তবে প্রতিদিন আদা খাওয়ার পরিমাণে চার গ্রামের বেশি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
আরও পরুনঃগাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
কুলিং এফেক্ট আদার প্রকৃতিক শীতল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ঘামকে উৎপাদিত করে,ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। আদা চা শরীরের তাপমাত্রার হালকা বৃদ্ধি করতে পারে। যার শরীরের প্রকৃতিক শীতল প্রক্রিয়াকে পরিচিতি করে। আদার এই অনান্য ক্ষমতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এবং অতিরিক্ত গরমেও সতেজ রাখে।
শরীরের আদ্রতা ধরে রাখে, গ্রীষ্মকালে হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদা চা খেলে তা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্যাফিয়েন যুক্ত পানি এর বিপরীতে আদা চা পান করতে পারেন। যা শরীরকে ড্রিহাইট্রেন করবে।
আদা চা কেবল তৃষ্ণা মেটাই না, পানির ঘাটতিও পূরণ করে। এটি শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এবং ড্রিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। পেটের সমস্যা দূরে রাখে, গরমে বিভিন্ন দাওয়াতে গেলে কিংবা একটু ভারী খাবার খেলেই হজমে গোলমাল শুরু হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আদা চা।
আরও পরুনঃবিভিন্ন প্রকার শাক সবজির উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ
এটি হজমে সাহায্য করার জন্য পরিচিতি। গরমের সময়ে খাবারের পরের পানিও হিসেবে এটি রাখতে পারেন। একটি পাজক এনজাইমের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে পুষ্টি শোষণ সহায়তা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আদার প্রকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা গরমের সময় সর্দি এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আদা চা রেডিক্যাল ক্ষতির বিরুদ্ধে শরীরের প্রতি রক্ষা শক্তি শালী করতে পারে, প্রদাহও কমাতে পারে। ত্বকের জন্য ভালো, উচ্চ এন্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত আদা চা,ঘামের মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিষাক্ত পদার্থ গুলোকে বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর রাখে ।
আদা চা খেলে আমাদের শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে
রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, একাধিক সমীক্ষা ও গবেষণায় দেখা গিয়েছে আদা খেলে ব্লাড প্রেসার কমে যাই। যারাউচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসারের রোগী তাদের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু যাদের ব্লাড প্রেসার লো বা নরমাল তারা কিন্তু অতিরিক্ত আদা চা পান করলে বিপদে পড়তে পারেন।
আরও পরুনঃ মধু খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সঠিক নিয়ম
প্রতিদিন অধিক মাত্রায় আদা চা খেলে তাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়তেও পারে। রক্ত ক্ষরণের কারণ হতে পারে, আদার মধ্যে আন্টিপ্লেটেড উপাদান রয়েছে। রসুন বা লবঙ্গের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত পরিমান আদা খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে রক্তক্ষরণের মাত্রা বেড়ে যায়।
এটি রক্তের কণিকা গুলিকে জমাট বাঁধতেও বাধা দেয়। তাই যদি অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের সমস্যা থাকে তাহলে আদা এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত পরিমাণ আদা খেলে শরীরে হজম সংক্রত নানা সমস্যা দেখা দেয়। হার্ড বার্নের কারন হতে পারে,শরীরে এসিড রিফ্লাক্সের মাত্রা কমিয়ে দেয় আদা। এর একাধিক প্রমাণ রয়েছে।
এর পাশাপাশি একাধিক সমীক্ষা দাবি করে শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ আদা খেলে হার্ড বার্নের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অসুস্থিও তৈরি করে। অন্তঃসত্তাদের জন্য বিপদ, মাথায় রাখবেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত আদা গর্ভপাতের কারণও হতে পারে। সাধারণত দিনে ১৫০মিলিগ্রাম পরিমাণ আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু এর থেকে বেশি পরিমাণ আদা খেলে অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বিপদ হতে পারে। চুল বৃদ্ধিতে বাধা দেয়, চীনের এক গবেষণায় বলছে চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে আদা। ওই গবেষণা জানাচ্ছে যদি প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ার সমস্যা থাকে তাহলে আদা খাওয়া কমিয়ে দিন। কারণ আদায় থাকা উপাদান গুলি চুলের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
শেষ কথা :আদা চা খাওয়ার উপকারিতা
উপরের কনটেন্টে যদি পড়ে থাকেন তাহলে আদা চা এর উপকারিতা সম্পর্কে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন। চেষ্টা করেছি আদা চা খেলে কি কি সমস্যাথেকে রেহাই মিলে সেগুলো জানানোর। আরো আলোচনা করেছি গরমে আদা চা খাওয়ার উপকার সম্পর্কে।
এছাড়াও জানানোর চেষ্টা করেছি আদা চা খেলে আমাদের শরীরের কি কি পরিবর্তন ঘটে। আশা করি আদা চা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের কোন কিছু জানতে আর বাকি নেই। আমাদের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে নতুন পোস্ট লিখতে উৎসাহিত হব।
আপনাদের ভাল লাগাই আর নতুন নতুন ইনফরমেটিভ পোস্ট লিখতে উদ্বুদ্ধ হব। এরকম আরো নতুন নতুন পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। এবং এত ভিজিট করুন কিছুক্ষণ ডট ওয়েব সাইটে কম।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url